Header Ads

সন্তানের হাতে ভালবাসা ও মমতার খুন


সাহাদাত সাঈদ

আমরা মানব জাতি দিন দিন উন্নতির শিখরে পৌছে যাচ্ছি। একদিন মানুষ রান্না করে খেতে জানতো না,পোষাক পরতে জানতো না। সব কিছুর পরিবর্তন হয়েছে আজ।

আগে মানুষ মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতো। এমনকি হজ্ব করতেও যেত পায়ে হেটে। এখন তা শুধু গল্প। আমাদের কাছে দাদা-দাদী,নানা-নানীরা এসব কথা বলতো তখন আমাদেরই গল্প মনে হত। এখনকার এই প্রযুক্তির যুগে এটা অবিশ্বাস্য ব্যপার।

দিনকে দিন সব কিছুর উন্নতি হলেও এখন পর্যন্ত আমাদের মানবতার উন্নতি সাধিত হয়নি। প্রযুক্তির এই সময় দাঁড়িয়ে যখন আমরা পৃথিবীকে ছোট একটি গ্রাম মনে করছি, ঠিক তখনই আমাদের সমাজের কিছু অসভ্য, কুলাঙ্গার এমন মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড করে যা মুর্খতার যুগকেও হার মানায়।

যে বাবা-মা শত কষ্ট করে সন্তানকে বড় করে তোলে। সে সন্তান সেই মা-বাবাকে সামন্য মটর সাইকেলের জন্য পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ইং বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে নতুন মডেলের মটর সাইকেল কিনে না দেওয়ায় ফারদিন হুদা মুগ্ধ (১৭) নামের এক যুবক তার মা  সিলভিয়া হুদা (৪০) এবং বাবা এটিএম রফিকুল হুদা (৪৮) কে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। কয়েকদিন পরে  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ইং তারিখে এটিএম রফিকুল হুদা মারা যান।

চট্টগ্রাম মহানগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকায়  (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ইং) সুমিত চৌধুরী নামের এক তরুণ তার মা কুমকুম চৌধুরী (৪৫) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল।

এর আগে ২০১৩ সালের ১৪ই অগাস্ট রাতে ঢাকার চামেলীবাগের নিজ বাসায় নিজের কন্যা ঐশী রহমানের হাতে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা (পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ) মাহফুজুর রহমান এবং তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান। (সূত্র: বিভিন্ন গণমাধ্যম)

মানবতার এ যে কত বড় ষ্খলন হয়েছে তা ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব।  শিক্ষার এই অগ্রতির রুটে দাঁড়িয়ে মানবতার যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক কু-লক্ষণ।

সমাজের কিছু বাব-মা আছে তারা সামাজিক স্ট্যাটাস বজায় রাখতে গিয়ে সন্তানকে যেমন খুশি চালাচ্ছেন সমাজের সাথে তাল-মিলিয়ে। যখন যা চাচ্ছে তা দিচ্ছে। এর পর মাত্রা এমন পর্যায় পৌছায় যখন সন্তান তার পিতা-মাতাকে আঘাত করতে দ্বিধা করছে না।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বড় ছোট কোন সম্মান নেই। আগে আমরা যেভাবে বড়দের সম্মান করতাম, এখন সেগুলো সমাজ থেকে বিদায় নিতে বসেছে। আমরা বড় ভাইদের মুখের উপর কোন কথা বলতাম না, কিন্তু এখনকার ছোট ভাইরা ঠাস ঠাস করে মুখের উপর কথা বলে, যা ইচ্ছা তা।

ছোট বেলায় সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। বড়দের প্রতি সম্মান বোধ শিক্ষা দিতে হবে। বড়দের সালাম দেয়া,তাদের সামনে বিনয়ী হওয়া, কল্যাণ ও ভাল কাজের প্রতিযোগিতা করা। এসকল ছোট বেলায় বাবা-মা আমাদের শিখিয়েছে।

ছোট বেলায় বাবার সাথে বাজারে গেলেও কোন খাবার বা কিছু কিনে দেয়া আবদার বা বায়না করেনি। এছাড়া কখনো বলিনি আমাকে একটা ভাল জামা প্যান্ট কিনে দিতে হবে। আজও বাবার কাছে টাকা চাই লজ্জা লাগে।

সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নৈতিক অবক্ষয় ও মানসিক বিষন্নতা দূর করা না গেলে এবং পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় না হলে বাড়তেই থাকবে এ ধরনের খুন।

সমাজবিজ্ঞানী ড. গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন,‘অতিমাত্রায় আধুনিকতার প্রতি আগ্রহী হওয়ায় মানুষের মধ্যে সামাজিক এবং পারিবারিক আদর্শ লোপ পাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। ফলে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা কমছে। আদর্শহীন ও রংচঙে আবহের কারণে ঘটছে নৈতিক অবক্ষয়। এতে করে পিতা-মাতাকে খুন করতে দ্বিধা করছে না সন্তানরা। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে মেনে চলতে হবে সামাজিক অনুশাসন এবং সুদৃঢ় করতে হবে পারিবারিক বন্ধন।’

অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক এবং বিকৃত মানসিকতার জন্য সন্তানের হাতে পিতা-মাতা খুনের মতো ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘নৈতিকতার চরম বিপর্যয়ের ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব। এতে করে তুচ্ছ ঘটনার কারণে প্রিয়জনকে খুন করতে দ্বিধা করছে না।’ ( সূত্র: বাংলাদেশ প্রিতিদন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬)

আমরা আজ শিক্ষা-দিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছি এর পাশা-পাশি আমাদের নম্রতা, ভদ্রতা ও মানবতায় এগুতে হবে। তাহলে আমরা হব সুখি, সমাজ হবে সুন্দর, পরিবার পাবে একটা সুখি, সুন্দর, নির্মল, পরিচ্ছন্ন পরিবার।


সাংবাদিক ও লেখক

No comments

Powered by Blogger.