Header Ads

ধর্ষকরা কি ক্ষমতাবলে বেঁচে যাবে

সাহাদাত সাঈদ

ক্ষমা করে দিস বোন, তোকে রক্ষা করতে পারেনি তোর এই হতভাগ্য ভাইয়েরা। বলছি সাত বছরের আয়শার কথা, যাকে ফারুখ নামের হায়ওয়ান ধর্ষণ করছে। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষ্যান্ত দেয়নি, ধর্ষণের বিচার চাওয়ার জন্য তাদের পরিবারকে শারীরিক ও মানসিকভাবে এমন নির্যাতন করেছে, শেষ পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে তার পিতা হযরত মাহমুদ। গতকাল (২৯ এপ্রিল ২০১৭ইং) শনিবার নিজের মেয়েকে নিয়ে তার পিতা ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়েছে। আর সেখানেই দু’জন নিহত হয়েছে।

প্রায় ৩০ বছর আগে দিনমজুর হজরত আলী শ্রীপুর উপজেলার কর্নপুর ছিটপাড়া গ্রামের হালিমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর হজরত স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে থাকতেন। অভাব-অনটনের সংসারের জোগান দিতে হালিমা ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। নিঃসন্তান হওয়ায় এ দম্পতি আয়েশাকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করতেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদেন মাধ্যমে জানা যায়, ফারুক নামের এক বখাটে যুবক প্রায় দুই মাস আগে আয়েশাকে ধর্ষণ করে। থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়া হলে ফারুক ও তার লোকজন হালিমা ও তার স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন এ ঘটনার বিচারের দায়িত্ব নেন। কিন্তু কোনো মীমাংসা ছাড়াই তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেন।

ক্ষমতাবানদের ছায়াতলে আশ্রয় পায় যত সব কুলাঙ্গার। ক্ষমতাবানদের উচিৎ সমাজের এই সকল নরাধমদের যে কোন মূল্যে বিচারের আওতায় নিয়ে আশা। জনগণ যাদের ক্ষমতার মসনদে বসান, তাদের দায়িত্ব হলে জনগণের নিরাপত্ত্বার বিধান করা। যে নেতা এটা না করবেন তারা নিজেরাই নিজেদের সাথে জুলুম করবে। অপেক্ষা করবেন মৃত্যুর আগেই ভুগ করতে হবে নিজের কৃতকর্মের ফল।

সাংবাদিকতার জন্য প্রতিদিন নিউজ করি, নিউজ পড়ি, প্রতিদিনই দেশের নানান প্রান্ত থেকে ধর্ষনের খবর পড়ে বিরক্ত হই এবং ভাবি, আমরা পশুর চেয়েও জঘন্য হয়ে গেলাম, ধর্ষণের মত খারাপ কাজ করতে একটুও বিবেকে বাঁধে না। বিচারের জন্য বাবা দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে, বিচারতো পায় না, উল্টো তাকে হয়রানির শিকার হয়।

১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে করা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে,২০০৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আট বছরে ধর্ষণের শিকার ৪ হাজার ৩০৪ জনের মধ্যে ৭৪০ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

বছরভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী,২০০৮ সালে ধর্ষণের শিকার ৩০৭ জনের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১১৪ জনকে। ২০০৯ সালে ধর্ষণের শিকার ৩৯৩ জনের মধ্যে ১৩০ জন, ২০১০ সালে ধর্ষণের শিকার ৫৯৩ জনের মধ্যে ৬৬ জন, ২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার ৬৩৫ জনের মধ্যে ৯৬ জন, ২০১২ সালে ধর্ষণের শিকার ৫০৮ জনের মধ্যে ১০৬ জন, ২০১৩ সালে ধর্ষণের শিকার ৫১৬ জনের মধ্যে ৬৪ জন, ২০১৪ সালে ধর্ষণের শিকার ৫৪৪ জনের মধ্যে ৭৮ জন এবং ২০১৫ সালে ধর্ষণের শিকার ৮০৮ জনের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৮৫ জনকে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস)এর পরিসংখ্যান বলা হয়েছে, (জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য) ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হন ১৮১ জন গৃহকর্মী। তাঁদের মধ্যে ধর্ষণের পর মোট কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও সংগঠনটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত বছরেই ধর্ষণের শিকার ১১ জনের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় চারজন গৃহকর্মীকে।

১৪টি দৈনিক পত্রিকা থেকে সংগৃহীত তথ্য দিয়ে বিএনডব্লিউএলএ দেয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের পর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৪২৭টি। এর মধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে ২ হাজার ৭৩৪টি। গত ছয় বছরে ধর্ষণের পর ৫০৮ নারীকে হত্যা করা হয়েছে এর মধ্যে মামলা হয়েছে মাত্র ২৮০টি ঘটনায়। আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১৬৮ নারী এবং মামলা হয়েছে মাত্র ১১৩টি।

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে এক ছাত্রীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা গোটা ভারতকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। এর কিছুদিন পরই ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে (মানিকগঞ্জ এলাকায়) চলন্ত বাসে এক পোশাককর্মীকে ধর্ষণ করে দুই বাসকর্মী।এভাবে সোহাগী জাহান তনুর মত অসংখ্য বোনেরা ধর্ষনের শিকার হয়ে জীবন দিয়েছে। এখনো তাদের পরিবার নিরবে কেঁদে যাচ্ছে একটু ন্যায় বিচারের আশায়।

এই যদি হয় দেশের অবস্থা তাহলে মা-বোনেরা কোথায় নিরাপদ হবে।এখানে আইনের শাসন বাস্তবায়িত না হওয়ায় দিনকে দিন এই ধর্ষনের সংখ্যা বাড়ছে।

আমাদের সমাজকে এই সকল ধর্ষকদের বিরুদ্ধে হতে হবে সোচ্চার। ধর্ষকদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। শিক্ষার জন্য শিক্ষা নয়, মানবতার জন্য শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। প্রত্যেক পরিবার তার পরিবারের সন্তানদের সর্ম্পকে খোঁজ খবর নিতে হবে। সন্তান কোথায় যায় কি করে সব। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে অন্যায়-অবিচার থেকে দূরে রাখে তাই প্রত্যেককে তার স্ব স্ব ধর্মের শিক্ষা নিতে হবে।

মেয়েরা আমাদের মায়ের জাত তাদের সম্মান দেখাতে শিখতে হবে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা সব জায়গায় ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে হবে। আইনের শাসন প্রয়োগ করতে হবে। ধর্ষক এমন শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ, যাতে কেউ ধর্ষণের চিন্তা মাথায় আনতে হাজার বার চিন্তা করে।


সাংবাদিক ও লেখক

No comments

Powered by Blogger.